তো আজকে আমি আলোচনা করতে যাচ্ছি সময়ের একটি চাহিদাসম্পন্ন বিষয় নিয়ে যেটি হচ্ছে বিবিএ তথা ব্যাচেলর অব বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন। তাহলে শুরু করা যাক আজকের আলোচনাঃ
সময়ের
সবচেয়ে উপযোগী এবং চাহিদাসম্পন্ন বিষয়ের
একটি, বিবিএ। দেশের চাকরির বাজারে এখন ব্যবসায় প্রশাসনে
স্নাতক (বিবিএ) ডিগ্রিধারীদের চাহিদা ব্যাপক। প্রতিযোগিতামূলক এই বিশ্বে পেশার
সাথে সঙ্গতিপূর্ণ এই বিষয়ে পড়ে
আপনারা গড়তে পারেন সফল
ক্যারিয়ার।
ব্যবসায়
শিক্ষার ক্ষেত্রে আরও অনেক পেশাগত
কোর্স (এসিসিএ, সিমা ইত্যাদি) থাকার
পরও শিক্ষার্থীরা বিবিএ বেশি করছে, এর
কারণ হলো, বিবিএতে তারা
অনেকগুলো বিষয় সম্পর্কে জানতে
পারে, ব্যবসার বিভিন্ন শাখায় তারা জ্ঞান লাভ
করতে পারে। কিন্তু অন্য কোর্সগুলোর ক্ষেত্রে
দেখা যায়, তারা একটি
কিংবা দুটি বিষয় নিয়ে
পড়াশোনা করছে। এখানেই বিবিএর বিশেষত্ব।
তবে
চাকরি পাওয়ার নিশ্চয়তা নির্ভর করে একজন শিক্ষার্থীর
জ্ঞানের ওপর, তার প্রজ্ঞার
ওপর। বিবিএ সনদ একজন শিক্ষার্থীর
চাকরি পাওয়ার নিশ্চয়তা নয়, বরং চাকরির
বাজারের প্রতিযোগিতায় প্রবেশের ছাড়পত্র মাত্র।
☑চাহিদা
ও ভবিষ্যতঃ
ব্যবসায়
প্রশাসন বিভাগে অর্থনীতি এবং ব্যবস্থাপনার ওপর
বেশি গুরুত্বারোপ করা হয়। এর
ফলে মূল লক্ষ্য থাকে
শিক্ষার্থীদের ভালো ব্যবস্থাপক হিসেবে
গড়ে তোলা। আর এই ব্যবস্থাপকদের
সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ রয়েছে। শুধু দেশেই নয়
বিদেশেও ভালো চাকরি পাওয়া
যায়। বাংলাদেশের বড় বড় বহুজাতিক
কোম্পানি, ব্যাংক, বীমা, মোবাইল খাত, এনজিওসহ প্রায়
প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যবসায় প্রশাসনের ছেলেমেয়েদের খুঁজে পাওয়া যাবে। এসব প্রতিষ্ঠানের নিচু
এবং মাঝারি পর্যায়ে তো বটেই, শীর্ষ
পর্যায়েও কাজ করছেন অনেকে।
এমনকি অনেকে বিদেশেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছে। যেমন- ইউনিলিভার,
ব্রিটিশ অ্যামেরিকান টোবাকো, এপিমোলার, কাতার ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন সনামধন্য প্রতিষ্ঠানেও ব্যবসায় প্রশাসনের ছেলেমেয়েরা সুনামের সঙ্গে কাজ করছে। এছাড়া
অনেকে সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগেও ভালো
কিছু করার চেষ্টা করা
যায়।
☑ বিবিএ
তে যা যা পড়ানো
হয়ঃ
বিবিএ’র কারিকুলাম এমনভাবে
ডিজাইন করা হয় যাতে
ব্যবসায় শিক্ষার পাশাপাশি একজন শিক্ষর্থী বিজ্ঞান,
মানবিক, সামাজিক বিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয়ে অল্পবিস্তর জ্ঞান লাভ করতে পারে।
বিবিএ তে বিভিন্ন বিষয়ে
(Major) প্রধান বিষয় রয়েছে। সেগুলো
হলো:
১. মার্কেটিং
২. হিসাব বিজ্ঞান
৩. ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং
৪.ব্যবস্থাপনা
৫. হিউম্যান রিসোর্স ব্যবস্থাপনা
৬. ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিসটেম প্রভৃতি।
এছাড়াও
দেশের বাইরে উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে Bachelor of
Science in Business Administration (BSBA) নামে
বিবিএ ডিগ্রী প্রদান করা হয়। এই
ডিগ্রীতে মূলত ব্যবসায় প্রশাসনের
কারিকুলাম ব্যবসায় শিক্ষার বিষয়ের পাশাপাশি বিজ্ঞানের বিষগুলোর উপর গুরুত্ব প্রদান
করা হয়।
☑ফিন্যান্সঃ
ফিন্যান্স
বিষয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হলো মূলধন ব্যয়
এখানে আপনাকে গড় মূলধন ব্যয়
বের করার জন্য সাধারণ
শেয়ার মূলধন ব্যয়, অগ্রাধিকার শেয়ার মূলধন ব্যয় এবং ঋণ মূলধন
ব্যয় বের করে গড়
মূলধন ব্যয় নির্ণয় করতে হবে। ফিন্যান্স
খুব ভাল সাবজেক্ট। যদি
শিখে বের হতে পারেন
অনেক লাভ। ম্যাথ পারতে
হবে কিন্তু। ম্যাথে কাঁচা হলে ভুলেও ফিন্যান্স
নেয়ার চিন্তা করবেন না। পড়াশোনা অনেক।
তাই পড়ার ধৈর্য না
থাকলে ফিন্যান্স না নেওয়াই ভালো।
☑একাউন্টিংঃ
HSC তে
যারা BS এর শিক্ষার্থী ছিলেন,
তাদের কাছে খুব সহজ
মনে হতে পারে। আসলেও
যারা HSC তে একাউন্টিং ভাল
পারত,তারা এইখানে এসেও
ভাল করে।
ফিন্যান্স
এন্ড একাউন্টিং দুটোই বস সাবজেক্ট কোন
সন্দেহ নাই। কিন্তু ধৈর্য
নিয়ে পড়তে হবে ! দুটোতেই
ম্যাথ ভাল পারতে হয়।
প্রচুর পড়াশোনা করা লাগে। ম্যাথ
ভাল পারলে ফিন্যান্স নিতে পারেন ।
দুটোই থিওরিটিক্যাল বিষয়টা বেশী গুরুত্ব দেয়।
ক্রিয়েটিভিটি প্রকাশের সুযোগ নাই বললেই চলে,
অন্তত বিবিএ তে। অনেক প্রফেশনাল
কোর্স আছে। যা চাকরির
ক্ষেত্রে অনেক ইতিবাচক ভুমিকা
রাখে।
☑মার্কেটিংঃ
আপনার
মাথায় কুচলা-পিচলা বুদ্ধি যদি থাকে মার্কেটিং
নিতে পারেন । বেস্ট হবে
আপনার জন্য। বিজনেস লাইনে নিজের ক্রিয়েটিভিটি দেখানোর জন্য দুনিয়ার সেরা
সাবজেক্ট মার্কেটিং ! কি নাই। প্রথাবদ্ধ
চিন্তা থেকে নতুন কিছু
করার হিউজ সুযোগ আছে
মার্কেটিং বিষয়টাতে। মার্কেটিং পার্টের সাথে অনেক কিছু
আছে। Research and
Development, New Product Designing।
পাড়ার মামা চাচারা খালি
বিক্রি বাট্টার কথাই চিন্তা করে।
কেও আবার বলে ‘ডেস্টিনি
সাবজেক্ট’। কিন্তু এইটার
ফিল্ড বিশাল। আপনি সাথে গ্রাফিক্স
ডিজাইনটা শিখে ফেলতে পারলে
তো সোনায় সোহাগা। থিওরি আছে। অনেকই আছে।
আবার নতুন কিছু করার
মজাও আছে।তবে যারা সায়েন্স থেকে
আসবেন আর ম্যাথে যদি
দখল ভাল না থাকে,তাহলে তাদের জন্য মার্কেটিং বেস্ট
!
☑ম্যানেজমেন্টঃ
বিবিএর
‘কমা’ সাবজেক্ট। কিন্তু জানেনকি একজন একাউন্টেন্ট, ফিন্যানশিয়াল
এনালিস্ট,ব্র্যান্ড ম্যানেজার সবার নিয়োগ দেয়
এই ম্যানেজমেন্টের লোকেরাই ! যদি টিমে কাজ
করা ভাল পারেন। পাড়ার
ক্রিকেট টিমকে ভাল লিড দিতে
পারেন। পাড়ার লিডার আপনি। অন্যের লিডারশীপ গ্রহণ করার মানসিকতা কম
থাকে আপনার জন্য এইটা বেস্ট।
থিওরিটিক্যাল বেশি।রেজাল্ট করা কঠিন। কিন্তু
লোক ম্যানেজ করাটাই হবে আপনার পেশা
! মজা না? মোটের ওপর
আপনার মধ্যে লিডারশিপ জিনিসটা থাকা লাগবে। ডিপ্লম্যাসি
থাকা লাগবে। বারগেইন করার ক্ষমতা থাকা
লাগবে। তাহলেই এই সাবজেক্ট আপনার
জন্য।
☑ব্যাংকিংঃ
ব্যাংকিংয়ের
ক্ষেত্রে আপনাকে প্রথমে ব্যাংকের সংজ্ঞা, উত্পত্তি ও ক্রমবিকাশ, ব্যাংকের
কার্যাবলি, উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে হবে। ব্যাংকের আমানত,
ব্যাংক হিসাব খোলার নিয়ম বাণিজ্যিক ব্যাংকের উদ্দেশ্য, কার্যাবলি, ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে আধুনিক পদ্ধতির প্রয়োগ ব্যাংক এবং গ্রাহকের মধ্যে
সম্পর্ক, দায়িত্ব ও কর্তব্য বর্ণনা,
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংজ্ঞা, উদ্দেশ্য, কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ঋণদানের শেষ আশ্রয়স্থল বলা
হয় কেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের
কার্যাবলি।
ব্যাংকিং
খুব ভাল সাবজেক্ট। যদি
ব্যাংকিং সেক্টরে আগ্রহ থাকে নিতে পারেন।
তবে সুদে এলারজি থাকা
যাবেনা। সুরা অনুসারে সুদ
কঠোর কঠোর কঠোর কঠোরভাবে
নিষিদ্ধ। আর বাংলাদেশের ৯০%
ব্যাংকের মুল আয়ই কিন্তু
সুদ। আর সেখান থেকে
হবে আপনার বেতন !
☑হিউম্যান
রিসোর্স ম্যানেজমেণ্টঃ
হিউম্যান
রিসোর্স ম্যানেজমেণ্ট বা মানব সম্পদ
ব্যবস্থাপনা।যেকোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন সাবজেক্ট।প্রাইভেটে অনেক আগেই
এসেছে।আর বাংলাদেশে আজকের বিবিএ প্রাইভেট ভার্সিটির হাত ধরেই এসেছে!
হিউম্যান
রিসোর্স ম্যানেজমেণ্ট বা মানব সম্পদ
ব্যবস্থাপনা বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়!
নাম
শুনেই এর গুরুত্ব বোঝা
যায়।
কোম্পানিতে
সব আছে কিন্তু মানুষ
নাই!
কাজ
হবে?
এই মানুষ যোগাড় বা কাটছাট করার
কাজ মানব সম্পদ ব্যবস্থাপকের!
☑উচ্চশিক্ষাঃ
বিবিএ
(মার্কেটিং, ব্যাংকিং ফিন্যান্স, একাউন্টিং,ম্যানেজমেন্ট,) ডিগ্রি লাভ করার পর
কোন শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্য কোন
বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ পড়াশুনা করতে পারেন।
দেশের
বাইরে অধ্যয়ন করার জন্য যে
সমস্ত স্কলারশীপ পাওয়া যায় সেগুলো হলো-
মনবুশো স্কলারশিপ (জাপান), কমনওয়েলথ স্কলারশিপ, ওয়ল্ড ব্যাংক স্কলারশিপ, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক স্কলারশীপ প্রভৃতি। বিবিএ/এমবিএ পর্যয়ে ইংল্যান্ড, কনাডা, আমেরিকা, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়াসহ অনেক
দেশেই স্কলারশিপ নিয়ে উচ্চতর শিক্ষার
জন্য যাওয়া যায়। ইন্টারনেট সার্চ
করলে এসব বৃত্তির তথ্য
সহজেই উদঘটন করা সম্ভব। তবে
দেশে অবস্থিত সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসসমূহে খোঁজ নিলে স্কলারশীপের
বিস্তারিত তথ্য জানা যায়।
☑চাকুরীর
ক্ষেত্রসমূহঃ
একজন
শিক্ষার্থীর বিবিএ পড়ার পেছনে মূল
কারণ হলো, বর্তমানে এ
বিষয়ে চাকরির প্রসার বেশি। এ ক্ষেত্রে সৃজনশীল
কাজের সুযোগ থাকায় শিক্ষার্থীরা নিজেদের উদ্ভাবনী ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে ব্যবসায়
বাণিজ্যের জগতে নানা পরিবর্তন
নিয়ে আসছে।
১. চাকরির বাজারে বিবিএ শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যাংক, বিমাসহ
বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর হিসাব বিভাগ, নিরীক্ষা বিভাগ, ট্যাক্স, আর্থিক প্রশাসন, আর্থিক ব্যবস্থাপনা বিভাগগুলোতে কাজের সুযোগ রয়েছে।
২. এছাড়াও সরকারি ও বেসরকারি স্কুল,
কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে
শিক্ষকতার মত মহান পেশায়
চাকুরির সুযোগ রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে ভাল
ফলাফলের অধিকারী হতে হবে।
৩. আবার অনেকে যারা
চাকরি করতে পছন্দ করে
না, তারা উদ্যোক্তা হয়ে
কাজ করেও সফল হতে
পারেন।
৪. বিবিএ/এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করলে বেশ দ্রুত
চাকুরি পাওয়া সম্ভব। বিশেষ করে প্রাইভেট অর্গানাইজেশনে
বিবিএ/এমবিএ’র চাহিদা আকাশচুম্বী।
৫. ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনী, প্রবেশনারী অফিসার, এক্সিকিউটিভসহ অফিসার পদে ভাল বেতন
ও সুযোগ সুবিধায় নিয়োগ প্রদান করা হয়।
৬. সেবামূলক প্রতিষ্ঠান, টেলি কমিউনিকেশন কোম্পানী,
গার্মেন্টস, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে
আকর্শণীয় বেতনে উচ্চ পদে চাকুরির
সুযোগ রয়েছে।
৭. বিপণন বা মার্কেটিং বিভাগে
কাজের সুযোগ রয়েছে।
৮. উদ্ভাবনী ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের জগতে নিজের প্রতিষ্ঠান
সৃষ্টি করার সুযোগ।
৯. বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি দেশীয় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মপরিধি প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ব্যবসায় প্রশাসনে একজন স্নাতক (বিবিএ)
তাঁর কর্মজীবনে আকর্ষণীয় বেতন, উন্নত সুযোগ-সুবিধা ছাড়াও সৃজনশীলতার প্রকাশ ঘটিয়ে যেকোনো প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদগুলোতে কাজ করার সুযোগ
পান
Comments
Post a Comment